Friday, July 26, 2013

আমাদের কন্যা সন্তান


আজকের এই ২০১১ সাল একবিংশ শতাব্দীর একটি অন্যতম বছর এই বছরটিতে আমাদের দেশে পঞ্চদশতম জনগণনা করা হয়েছে তার প্রভিসনাল ফলাফল ঘোষিত হয়েছে আমি ঐ কর্মযজ্ঞের অন্যতম সদস্য হওয়ায় আমার ওপর তার যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে
উক্ত ফলাফলের মধ্যে লিঙ্গ অনুপাত সম্পর্কিত তথ্য তুলে ধরতে চাই ২০০১ সালের জনগণনায় ভারতে ০-৬ বছর বয়সের প্রতি হাজার পুত্র শিশুর তুলনায় কন্যা শিশুর সংখ্যা ছিল ৯২৭২০১১ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৯১৪ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এটাই সর্বনিম্ন রাজ্যের ক্ষেত্রে সর্বাধিক অনুপাত মিজোরামের ৯৭১ এবং সর্বনিম্ন হরিয়ানা ৮৩০ জেলার ক্ষেত্রে সর্বাধিক হিমাচল প্রদেশের লাহুল-স্পিতি জেলার ১০১৩ এবং সর্বনিম্ন হরিয়ানার ঝাজ্জর জেলার ৭৭৪
সব বয়সের ক্ষেত্রে ভারতের ৯৪০, সর্বাধিক কেরালার ১০৮৪, সর্বনিম্ন দমন ও দিউ এর ৬১৮ এবং পশ্চিমবঙ্গের ৯৪৭ ২০০১ সালে যা ছিল ভারতের ৯৩৩, সর্বাধিক কেরালার ১০৫৮,সর্বনিম্ন দমন ও দিউ এর ৭১০ এবং পশ্চিমবঙ্গের ৯৩৪ সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে ২০১১ সালে সর্বাধিক দার্জিলিং এর ৯৭১, সর্বনিম্ন কোলকাতার ৮৯৯ যা ২০০১ সালে ছিল সর্বাধিক পশ্চিম মেদিনীপুরের ৯৬১, সর্বনিম্ন কোলকাতার ৮২৯
উপরের তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে যে, বিগত এক দশকে মেয়েদের সংখ্যা কমেছে কিন্তু সাক্ষরতার হার সেটাকে আটকাচ্ছে বলে আমার মনে হয় ভারতের রাজ্য গুলির মধ্যে সর্বাধিক সাক্ষর(৯৩.৯১%) কেরালা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তবে লিঙ্গ অনুপাতে সাক্ষরতার প্রভাব থাকলেও তার থেকে বেশী প্রভাব ফেলেছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আচার এবং তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি
বিংশ শতাব্দীর পূর্বে যখন লিঙ্গ নির্ধারণ ব্যবস্থা ছিল না তখন থেকেই পুত্র সন্তানদের বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মেয়েদের থেকে ছেলেদের বেশি মূল্যবান ও আকাঙ্খিত মনে করা হয়েছেসেখানেই আধুনিক শিক্ষিত উচ্চ বিত্ত মা-বাবাদের সুবিধা করে দিয়েছে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি জন্মের পূর্বে লিঙ্গ নির্ধারণ ১৯৯৫ সাল থেকে বেআইনি ঘোষিত হওয়ার পরও আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জেনে নেওয়া হচ্ছে ৭ থেকে ১৪ সপ্তাহ বয়সের ভ্রূণের লিঙ্গ বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই কন্যা ভ্রূণেদের নষ্ট করা হচ্ছে গর্ভপাতের মাধ্যমে যদিও লিঙ্গ নির্ধারণের যে পদ্ধতিগুলি চলছে সেগুলি যে সম্পূর্ণ সঠিক সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে
যারা সূর্যের আলো দেখতে পাচ্ছে তাদের ভাগ্যে বেশীরভাগ সময়েই জুটছে অবহেলা, বঞ্চনা যদিও তা হয়তো আগের তুলনায় কম বলেই আমার মনে হয়  এর কারণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেয়েদের  সাফল্য ও কর্মকাণ্ড  তার সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে সরকারী আর্থিক সাহায্য  নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর মেয়েদের দেওয়া হচ্ছে উৎসাহ ভাতা যার ফলে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এ মা-বাবারা মেয়েদের পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন বৃদ্ধি পাচ্ছে ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের সংখ্যা আমাদের মাদ্রাসার পরিসংখ্যান (ছাত্র ৩৪০ ও ছাত্রী ৬৬০) ও তাই বলছে
এসবের মধ্যেও কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার প্রবনতা কমার লক্ষন কিন্তু খুবই কম দেখা যাচ্ছে এই মাদ্রাসারই পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণীর অনেক ছাত্রীই বিবাহিত অনেকে মাদ্রাসায় আসেনাসন্তানের মা হয়ে যাওয়ার কারনে আর্থ-সামাজিক কারনেই অনেক মা-বাবা মেয়েদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব থেকে মুক্ত হতে চাইছেন যেহেতু পড়াশোনার কারণে মেয়েদের বাড়ি বা গ্রামের বাইরে আসতে হচ্ছে, অনেক সময় নিজেদের ভালোমন্দ না ভেবে বাইরের মুক্ত হাওয়ায় নিজেদের ভাসিয়ে দিচ্ছে পা চলে যাচ্ছে ভুল পথে সেই জন্যই ভবিষ্যতে বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা এড়াতে এধরনের ঘটনা ঘটছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিশোরী মেয়েদের তরফেই বাধা আসছে, কখনও বা পুলিশ প্রশাসনশিক্ষক-শিক্ষিকাদের এব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা উচিত বলে আমার মনে হয়
বিবাহিত জীবনেও তাদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে অনেকে হচ্ছে পণ প্রথার শিকার বেআইনি ঘোষিত হলেও পণ প্রথা কোনোদিন সমাজ থেকে বিলুপ্ত হবে বলে আমার মনে হয় না বিভিন্ন রূপে তা চিরকাল থেকে যাবে বিবাহ পরবর্তীকালে বিভিন্নভাবে অত্যাচারিত হচ্ছে তারা শ্বশুরবাড়ির কোনো না কোনো সদস্যের হাতে বিধবা হলে তারাও নানা ভাবে অত্যাচারিত হচ্ছে, বাকি জীবনের সুখ-শান্তি অধরাই থেকে যাচ্ছে তাদের কাছে

তথ্যসুত্রঃ
Censusindia.gov.in & Wikipedia.org

Booklet for Counting Personnel...

Counting Booklet for WB Panchayat Election 13

We - The RM

Saturday, July 13, 2013